Home / TRENDING / “মাতব্বরির জেরেই হেরেছি”, হুগলির সভায় বললেন তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল

“মাতব্বরির জেরেই হেরেছি”, হুগলির সভায় বললেন তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল

নিজস্ব সংবাদদাতা।‌

তৃণমূল নেতাদের মাতব্বরির জেরে হুগলি জেলায় বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। শুক্রবার শেওড়াফুলির সত্যজিৎ ভবনে হুগলি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছিল।‌ সেখানে বক্তাদের তালিকায় যেমন ছিলেন হুগলি জেলা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ববৃন্দ, তেমনি ছিলেন নির্বাচিত বিধায়করাও। সেখানেই উত্তরপাড়ার  বিধায়ক বলেন,”নিজেদের সব মাতব্বর মনে করেছি। তাই হেরে গিয়েছি। সব জায়গায় একই হয়েছে। আমরা নিজেদের সংশোধন করব না। আর আমরা বিজেপিকে শত্রু বলছি।” বিধায়ক যখন এমন সমালোচনামুখর বক্তৃতা করছেন, তখন মঞ্চে বসে হুগলি জেলা থেকে নির্বাচিত মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, বিধায়ক বেচারাম মান্না, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সুদীপ্ত রায়, রচপাল সিং, মানস মজুমদার সহ প্রায় সকলেই।

নিচে শ্রোতাদের আসনে বসে ব্লক স্তরের নেতাদের থেকেই প্রতিবাদটা এল প্রথমে। সেখান থেকেই কয়েকজন ব্লকের নেতা বলে উঠলেন, “এসব কথা বলার জায়গা এই সভা নয়। এসব রাজ্য স্তরের মিটিংয়ে বলবেন।” নিজের বক্তৃতা থামিয়ে প্রবীর ঘোষাল বলেন, “এখানেই বলতে হবে। কেন বলব না ? তাহলে কর্মীরা জানবে কি করে এসব কথা? আমাকে থামাতে পারবেন না, আমি বলবোই। এখানে জেলা নেতৃত্ব রয়েছেন। আপনারা চান না দলটা ঐক্যবদ্ধ থাকুক?” উত্তরপাড়া সাংবাদিক বিধায়ক আরও বলেন, “আমি আমার অবস্থানের স্থির থাকব। আমাকে থামানো যাবে না।”

এমন সময় মঞ্চের নিচে বসা দু তিনজন কর্মকর্তা উঠে মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদবের কানে কিছু একটা বলেন। শোনামাত্রই বিধায়কের দিকে এগিয়ে যান জেলা সভাপতি। তাঁর হাত থেকে লাউড স্পিকার নিয়ে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করেন দিলীপ যাদব। তিনি বলেন, “বিধায়ক আপনাদের নিজের মত, নিজের ভাবনা বলছেন। তাঁকে বলতে দিতে হবে। তিনি রাজ্য কমিটিতে বলতে পারেন, এখানেও সব বলতে পারেন। আপনাদেরও দলের বলার জায়গা রয়েছে। সভাটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে দিন।” মঞ্চের নিচে থাকা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দিলীপ যাদব আরও বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বে নির্দেশেই এই সভা করছি। তাই সভাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে দিতে হবে।” এরপর আবারও প্রবীর ঘোষালের হাতে লাউডস্পিকার তুলে দিয়ে বক্তৃতা করতে অনুরোধ করেন দিলীপ।

কিন্তু এরপর আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত নিজের বক্তৃতা শেষ করে দেন উত্তরপাড়া তৃণমূল বিধায়ক। কিন্তু বক্তৃতার শেষপর্বে তিনি বলেন, “আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি এসব কথা বলার লোক নয়। আমি আহত হয়েছি, ভোটে প্রানপাত করে খেটেছি। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।” প্রবীর ঘোষাল আরও বলেন, “আমি বাধ্য হয়েই কথাগুলো বলছি। কারণ, এই মানুষগুলো যদি কোনওভাবেই বিজেপিতে চলে যায়। তাহলে আমার ঘরে দোষ পড়বে,  সবাই বলবে আপনার এলাকা থেকে বিজেপিতে চলে গেল। আমায় ক্ষমা করবেন। আপনাদের কাছে বলে আমি খানিকটা মনের ব্যাথা লাঘব করলাম। আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।”

প্রসঙ্গত, হুগলি জেলার সাংগঠনিক কাজকর্মে একেবারেই খুশি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে হুগলি আসনে তৃণমূলের দুবারের সাংসদ রত্না দে নাগের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের কারণেই ক্ষুব্ধ তিনি। এবং আরামবাগ আসনে মাত্র ১১৪২ ভোটে জয় এসেছে। শ্রীরামপুরে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য জয়ী হলেও, শ্রীরামপুর বিধানসভায় তাঁর সাড়ে তিন হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়া ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। ইতিমধ্যে জেলা সভাপতি পদ থেকে তপন দাশগুপ্তকে সরিয়ে দিলীপ যাদবকে দায়িত্বে আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যে হুগলি জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের হাবভাবে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি, তা এদিনের সভায় প্রবীর ঘোষালের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে।

Spread the love

Check Also

কেমন হলো, মুখ্যমন্ত্রীর এপিসোডের প্রথম ঝলক ?

সুচরিতা সেন, বিনোদন ডেস্ক রোজ বিকেলে বাংলার প্রতিটি ঘরে বিনোদন শুরু হয় এই শো এর …

বছর শুরুতে শিব দরবারে মিমি

চ্যানেল হিন্দুস্তান, বিনোদন ডেক্স বর্তমানে বেনারস ভ্রমণে ব্যস্ত টলিউড নায়িকা। সেখানকার অলি-গলিতে ঘুরছেন। সদ্য ওটিটি …

রশিদ খানের ফিরে দেখা জীবনধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক, সুচরিতা সেন, আবার নক্ষত্রপতন, না ফেরার দেশে চলে গেলেন ওস্তাদ রশিদ খান। গানের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *