মূল হিন্দি রচনা : শরদ জোশী
অনুবাদ : পার্থসারথি পাণ্ডা
ভোট এখন ঠিক গণতন্ত্রের দানপাত্রে দেওয়া ভিক্ষা নয়। ভোট এখন এমন এক সুতীক্ষ্ণ ছুরি, যেটা কারও পেটে, কারও পিঠে সমূলে সুযোগ বুঝে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়! ভোট এখন এমন এক বীজ, যা থেকে বনস্পতি বা ফলের আশা করাটাই বৃথা। ভোট এমন এক কুঠার, যার কোপ মানুষের বুদ্ধির মতোই বিভ্রান্ত। ভোট এমন এক ধরণের যন্ত্র যা দিয়ে গণতন্ত্রের গাড়ি ধোয়া হয়। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, সেই গণতন্ত্রের গাড়িতে আপনার কোন দাবি নেই এবং আপনাকে ধুতেও হয় মালিক ইচ্ছেয়! ভোট যে-কোন সময় জঞ্জালও হয়ে উঠতে পারে, যদি আপনি সেটাকে ডাস্টবিনে ফেলতে মনস্থির করেন। ভোট মাখনও হতে পারে, যদি আপনি ক্ষমতার খপ্পরে গলে যান!
ভোট এমন একটি শব্দ, যার অর্থ অনেক। ভোট রাগ, ভোট আশীর্বাদ, ভোট স্তুতি, ভোট আবেদনপত্র। ভোট বিছের বিষ নামানোর মন্ত্র। ভোট ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, জমির পরচা, আপনার ভবিষ্যতের ঠিকুজি, যা চিরকুটের ভিড় থেকে রামভরোসে খাঁচার টিয়া বেছে দেয়। ভোট আঁধারের দিশা শিস। অপরিচিতাকে পটাতে চোখ মারা। যা ব্যর্থ হতে পারে কিংবা সম্ভাবনাও এনে দিতে পারে। ভোট একটা সপাট থাপ্পড়। অত্যাচারে তেতো মারমুখী জুতো। ভোট একদিকে নৌকা, অন্যদিকে দাঁড়। ভোট অপশাসকের জাহাজে প্রতিবাদী ফুটো।
ভোট আসলে স্ত্রীকে দিল্লি প্রেরক স্বামী। ভোট ভেদ-বিভেদের চিত্তির, কোন অপরিচিতার আলিঙ্গনে অনিশ্চিত রাত্তির। ভোট এক মিষ্টি মিথ্যে। তেতো সত্যি। ভোট নিজেকেই নিজে দেওয়া প্রচণ্ড এক ধাপ্পা ভোট যেন কপাল ফুঁড়ে পাওয়া এক অপেক্ষমান সুযোগ।
ভোট স্বার্থ মাখানো ভালোবাসা। সনাতনী ফাটল। ভোট শত্রুর শত্রু, বন্ধুর বন্ধু। ভোট একদিকে মেধা, অন্যদিকে আয়না। ভোট রাম, ভোট রাবণ। ভোট ঘিলু ঘোলানো গদা। ভোট রামবাণ। ভোট সেই শক্তিবাণ, যা টিভি স্ক্রিনের মাঝামাঝি এসেই দপ করে নিভে যায়। ভোট ডেলি সোপ, কয়েক হপ্তা বোকা বানানোর নাটক।
ভোট চুষে ফেলা আম। বেশ কিছুদিন কিছু না করার আরাম।
ভোট কাগজের নৌকা। মন ভোলানো গালিবী গজল। ভোট সকালের স্বপ্ন। চলনসই ক্ষুরে সস্তা নতুন ব্লেড। ভোট দরাদরিতে কেনা নারকেল, নষ্টশাঁস যার ভবিষ্যৎ। ভোট লটারির টিকিট। ঠাকুরের পায়ে দেওয়া ব্যর্থআশা ষোল আনা। ভোট বামনের হাতের চাঁদ, গোদের ওপর বিষফোঁড়া।
ভোট টেম্পোরারি জোছনা। দু’চারদিনের অতিথি। ভোট ছুঁড়ে দেওয়া তির, যার ফেরার রাস্তা বন্ধ। ভোট গলাবাজের গালি, যা প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে। ভোট পথিকতুষ্ট আত্মা। তৃষ্ণাতুরের জল। দারুণ রোদে ছাতা। পরের চাকায় হাওয়া দিতে ধার দেওয়া পাম্পার।
ভোট ভোরের শিশির। ভোট জলাশয়ে অবোধদানে এক কলসি দুধ কিংবা দুধপুকুরে এক কলসি জল। ভোট জলাশয়ে দুধের ব্যর্থতা এবং দুধপুকুরে জলের ব্যর্থতা। ভোট আপনার বরাত, ভোট আপনার স্বার্থ, ভোট আপনার নীতি। ভোট হয় আপনার সারল্য, নয় আপনার চরম মুর্খামি।
ভোট প্রায়শই ক্রীত শরীর, বিক্রিত আত্মা। ভোট দেওয়ার সময় চেষ্টা করলে শরীর ও আত্মা বশে রাখা যায়, বন্ধকও দেওয়া যায়। আপনি চাইলেই ভোটবাক্সটি হতে পারে দুর্নীতি বিরোধী কালপাত্রী, নয়তো নিছক জঞ্জালে ভর্তি।