দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়:
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে একটি বিবৃতি বোমা ফাটিয়ে গেছেন।
তিনি বলেছেন, একুশের নির্বাচনে রাজ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসনের জন্য লড়বে বাম-কংগ্রেস জোট ও তৃণমূল।
তাঁর এই কথার অর্থ দাঁড়ায়, প্রথমত, নির্বাচনে বিজেপি প্রথম স্থান অধিকার করে সরকার করবে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের ত্রিমুখী লড়াইতে তৃতীয় হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে!
ভোটবোদ্ধা হিসেবে অমিতের দেশজোড়া সুনাম রয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি না মিললেও মোটের ওপর শাহের নির্বাচনী পারফরমেন্স যে ভাল তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কারও কোনও সংশয় নেই।
নির্বাচন বোঝার পরিপ্রেক্ষিতে অমিত শাহের ‘বেঙ্গল ভারসান’ হিসেবে যাঁর নাম উঠে আসে তিনি মুকুল রায়। অনেকে তাঁকে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য বলতেও পছন্দ করেন। ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন, যখন থেকে তৃণমূল জয়ের স্বাদ পেতে শুরু করেছে, তখন থেকেই মুকুলের ভোট-ভবিষ্যদ্বাণী ধারাবাহিক ভাবে মিলে গেছে।
২০১১ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে কংগ্রেস ও বাম রাজনীতির বড় ও দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত প্রবীন রাজনীতিকরা যখন ব্যক্তিগত স্তরে কথাবার্তায় বলছিলেন, বাম অথবা তৃণমূল, যে দলই জিতুক না কেন ফলাফল নির্ধারিত হবে খুব অল্প মার্জিনে। সেদিনও নিজাম প্যালেসে বসে মুকুল রায় বলেছিলেন ‘ব্যপক জয় পাব আমরা।’ বাস্তবে তেমনটাই হয়েছিল। এমনকি ২০১৬ সালে, যখন তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, তখনও মুকুলের বক্তব্য ছিল, ‘এবারে আরও ভাল ফল হবে।’
২০১৯ -এ লোকসভা নির্বাচনে মুকুল বিজেপিতে। ভোট বিশেষজ্ঞরা যখন ভরসা করে বিজেপিকে ১০ টি আসনের বেশি ‘ছাড়তে’ পারছিলেন না, তখনও মুকুল বলেছিলেন কমবেশি ২০। বিজেপি ১৮ টি আসন পেয়েছিল।
এবারও মুকুলের হিসেব সারা। তৃণমূল কে ৮০ টি আসনের নীচে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও যে কথাটি বলছেন, সেটি আরও মারাত্মক!
তাঁর মতে তৃণমূল যদি বিরোধী দলে বসেও, সেই মর্যাদা তারা বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না। নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে দলের ভাঙন। তৃণমূল থেকে যাঁরা কোনও কারনে বিজেপিতে আসতে পারবে না, তারা চলে যাবে কংগ্রেসে। মমতার জন্য মুকুলের উপদেশ, রাজনৈতিক ভাবে বেঁচে থাকতে গেলে মমতাকেও কংগ্রেসে যোগ দিতে হবে।
গত বছর ১৪ আগস্ট চ্যানেল হিন্দুস্তানের সম্পাদক দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়ের কথোপকথন টি এখানে আরও একবার তুলে ধরা হল।
দেবক : কী মনে হচ্ছে? কী হবে একুশে?
মুকুল : তৃণমূল কংগ্রেস ৮০ টি আসনও পাবে না। বিরোধী দলের মর্যাদা ধরে রাখতে পারবে না।
দেবক : প্রশান্ত কিশোর এতটা ব্যর্থ হবেন?
মুকুল : আমি একটি পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে সার্ভে করিয়েছি। তাদেরই রিপোর্ট, আশির নীচে নামবে তৃণমূল।
দেবক : লোকসভা নির্বাচনে আপনি যা বলেছিলেন, মোটের ওপর মিলেছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আপনার মতামতের সব সময়ই আলাদা গুরুত্ব থাকে। তবু আপনার কি মনে হচ্ছে না মমতা ড্যামেজ কনট্রোল করছেন?
মুকুল : করতে পারেন। করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু মানুষ ওঁকে বাতিল করে দিয়েছে। ট্রেন চলে গেছে।
দেবক : ২১-এর লড়াইকে কি আপনি হালকা ভাবে নিচ্ছেন?
মুকুল : কখনওই না। ২১- এর লড়াই বড় লড়াই। তবে লোকসভা নির্বাচনেও যা বুঝেছিলাম আগে থেকেই বলে ছিলাম। এবারেও বলছি। ধরাশায়ী হবে তৃণমূল।
দেবক : মমতাকে এতটা দুর্বল ভাবার কোনও কারন আছে কি?
মুকুল : আমি কাউকেই দুর্বল ভাবছি না। কাউকে হালকা ভাবেও নিচ্ছি না। আমার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ যা বলছে, তাই বলছি।
দেবক : আর কী বলছে আপনার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ?
মুকুল : মমতার বাঁচার একটাই পথ কংগ্রেসে যোগ দেওয়া। এমনিতেই একুশের পর কিছুদিন বিরোধী আসনে থাকবে তৃণমূল। তারপর ওই মৃতপ্রায় দল ধরে রাখা মমতার দায় হবে। তাই কংগ্রেসে মিশে যাওয়াই মমতার পক্ষে মঙ্গল।
দেবক : ৩৭০ নিয়েও মমতা তেমন রব তুলতে পারলেন না! আপনি কী বলেন?
মুকুল : মমেতার সব সাংসদই মমতার সঙ্গে নেই ! ডেরেক, দোলা ও আরও কয়েকজন যখন সংসদে স্লোগান তুলছে তখন পিছন ফিরে দেখছে সুখেন্দু রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাংসদ উল্টোদিকে হাঁটছে।