চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো।
লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পর আবারও সেই সম্পর্ক জোড়া লাগাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র (Somen Mitra)। কিন্তু, তাঁর প্রয়াণের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই রাজ্যে রাজনৈতিক লড়াই ক্রমশ তৃণমূল বনাম বিজেপির মেরুকরণের রূপ নেওয়ায় অপ্রাসঙ্গিক হতে শুরু করে বাম-কংগ্রেস (Left-Congress)। এমতাবস্থায় প্রকৃত পরিস্থিতির কথা বুঝে ফের কাছাকাছি আসতে শুরু করে দু’পক্ষই। গত মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জয়ী হন। তারপর থেকেই ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
কিন্তু, আচমকা তাঁর মৃত্যুতে ফের একবার জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সোমেন মিত্র জোটবদ্ধ কর্মসূচি দিয়ে জোট সম্পর্ক জোড়া লাগাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ড. সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) বক্তব্য, “জোট হচ্ছে আসলে একটি পলিসি। এটা কোনও ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু, বাম – কংগ্রেসের জোট গড়তে সোমেন মিত্র যে সমস্ত দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি আশা করব, তিনি যেভাবে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির বিরুদ্ধে বামেদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে চেয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব সেভাবেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবেন।”
এ প্রসঙ্গে তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা বলেছেন, “বাম-কংগ্রেস জোটকে জোরালো করতে সোমেন মিত্র যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা তাঁর মতো বলিষ্ঠ নেতারা পক্ষেই সম্ভব। শুধু বামেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা নয়, তিনি যৌথ আন্দোলনের পক্ষেও সাওয়াল করেছিলেন। কিছু আন্দোলনে তিনি সামিলও হয়েছিলেন। তৃণমূল ও বিজেপি-কে রুখতে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রয়োজনীয়তা কতটা তাও বুঝতেন সোমেন মিত্র। তাই তাঁর মতো দক্ষ সংগঠককের মৃত্যুতে জোটের ক্ষতি হল বলেই আমার মনে হয়।” ফরওয়ার্ড ব্লকের যুবনেতা তথা চাকুলিয়া বিধায়ক আলী ইমরান রামজের কথায়, “বামেদের কংগ্রেসের জোট ভেঙে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন কোনও ঘোষিত জোট হয়নি। তাই সোমেন মিত্রের মৃত্যুতে এ বিষয়ে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই আমি মনে করি।”
প্রসঙ্গত, সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে এআইসিসিতে। ইতিমধ্যে কলকাতায় এসে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ ও সহ পর্যবেক্ষক বিপি সিং। বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিনজন কংগ্রেস নেতা। প্রথমজন রাজ্যসভার সংসদ সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। কংগ্রেস হাইকমান্ড আপাতত ২০২১ সালের ভোটের কথা মাথায় রেখেই পরবর্তী সভাপতি করতে চায়। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে সুষ্ঠু জোট গড়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন এমন কাউকেই চাইছে এআইসিসি। বর্তমানে অধীর চৌধুরী লোকসভার দলনেতার সঙ্গে পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তাই তাঁর সভাপতি পদে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয় বলেই মনে করছে বিধান ভবন। আর আব্দুল মান্নান সিপিএমের একাংশ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক থাকলেও, রাজ্য নেতাদের অন্য অংশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। তাঁর নাম মাথায় থাকলেও জোট সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা তৈরীর বিষয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি এআইসিসি। সেক্ষেত্রে অশীতিপর হলেও, অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য বর্ষিয়ান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। কারণ, এবার বামেদের সঙ্গে জোট গড়তে সোমেন মিত্র সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী ছিলেন প্রদীপই।