রণবীর ভট্টাচার্য
ক্রিকেট বড় অদ্ভুত এক খেলা! দল গত যতটা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জায়গা ততটাই। তবে খেলার নিয়মের বাড়তি সুবিধা পাওয়া ব্যাটসম্যানদের জন্যে আবার ‘টাইমিং’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত থেকে বীরেন্দ্র শেহবাগ, সবাই এর ভালো ও খারাপ দিক উপলব্ধি করেছেন। কিন্তু আজ জন্মদিনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ‘টাইমিং’ নিয়ে কি এত ভাবতে হবে? এটা কি হেলিকপ্টার শট, না অবসর না রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ‘টাইমিং’? ক্যাপ্টেন কুলের কাছেই এর জবাব আছে। পর্দার ধোনিকে আমরা হারিয়েছি কয়েক দিন আগে, সেই আঘাত এখনও সামলাতে পারেনি সিনেমাপ্রেমী ভারত। কিন্তু আসল ধোনির নিস্তব্ধতা ভাবায় আজও। মার্টিন গুপ্তিলের ছোড়া বল যখন সেমিফাইনালের ম্যাচে উইকেট ভেঙে দেয় ধোনির, টিভির পর্দায় এমএসডির চোখে এক চিলতে জল দেখেছিল সারা বিশ্বের মানুষ। কেমন আছো তুমি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি?
ক্রিকেটের যতরকম সাফল্য পেতে পারে কোন পেশাদারি খেলোয়াড়, তার বেশিরভাগটাই পেয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। অধিনায়ক হিসেবে এক দিনের ক্রিকেট ও টি টোয়েন্টির বিশ্বকাপ জিতেছেন, প্রায় এক দশকের কাছাকাছি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সব ধরণের ফরম্যাটে, টেস্টে ভারতকে নিয়ে পৌঁছেছেন এক নম্বরে। আইপিএলের (IPL) রঙিন দুনিয়ায় চেন্নাই সুপার কিংসকে নিয়ে বিজয়রথে এগিয়েছেন কতবার। উইকেটরক্ষক হিসেবে ধোনির মত কার্যকরী ক্রিকেট আর কাউকে দেখেছে কিনা সন্দেহ! ব্যাটসম্যান ধোনি তো দেশের আশা-ভরসা, তাই কুলশেখরার বলে সেই ছয় চিরকালের জন্যে থেকে গিয়েছে সমস্ত ভারতবাসীর কাছে। ভারতীয় সেনার জলপাই পোশাকেও সমান উজ্জ্বল সবার প্রাণের মানুষ ‘মাহি’। কিন্তু ধোনির কি সত্যি ভারতকে আর কিছু দেওয়ার নেই ক্রিকেট জীবনের সূর্যাস্তে এসে?
না, কোচ বা বোর্ডকর্তা নয়, তার জন্যে সৌরভ, সচিন, দ্রাবিড়, লক্ষণরা তো আছেনই। ভুলে গেলে চলবে না, রাঁচির অখ্যাত জায়গা থেকে উঠে আসা ধোনি কিন্তু নতুন ভারতের অন্য রকমের ‘আইকন’, যাকে নেপোমিটার দিয়ে মাপলে কোন দোষ পাওয়া যাবে না। তথাকথিত মেগাসিটির ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ার বাইরে সাফল্যের সেরা মাপকাঠি ধোনি। অদূর ভবিষ্যতে ধোনির মত জনপ্রিয় আবার ভীষণ ভাবে ঠান্ডা মাথার মানুষ যদি মানুষের সেবায় আরো বড় দায়িত্বে আসেন, তাহলে সেটা যত না বড় চমক হবে, তার চেয়েও বেশি আশার হবে। তবে রীতি স্পোর্টস বা আইপিএল এর ম্যাচ গড়াপেটা – রাজনীতির দুনিয়ায় কিন্তু কাঁটার সংখ্যা অনেক বেশি আর সেখানে কিন্তু শ্রীনিবাসনের মত কারোর আশীর্বাদ চট করে পাওয়া সহজ নয়।
এই লকডাউনের মন খারাপের মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া চুনী গোস্বামী কিন্তু নিজের সময়ে দেখিয়েছিলেন সেরা থাকতে থাকতে কিভাবে অবসরের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ধোনি কি ওনার জীবনের পাতা থেকে কিছু নিতে পারেন? তবে ঝাড়খণ্ডের মানুষ কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উপর এখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। আরো একবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।