চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো।
“অর্ধশিক্ষিত হাইটেক নেতারা এখন তৃণমূল চালাচ্ছে। আর অপমানিত হচ্ছেন তৃণমূলের পুরোনো দিনের নেতাকর্মীরা।” এভাবেই তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনায় সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের জয়হিন্দ ভবনে তাঁর নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিবেকের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের (Tamonash Ghosh) স্মরণসভা। যে সভায় হাজির হয়েছিলেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র (Madan Mitra)। স্মরণ সভায় হাজির আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “তমোনাশ ঘোষের মতো নেতারা ছিলেন তৃণমূলের আসল সম্পদ। যাঁদের লড়াইয়ের কারণে আজ তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায়। কিন্তু এখন তাদের মতো রাজনৈতিক কর্মীদের বদলে হাইটেক নেতারা সব তৃণমূল চালাচ্ছেন।” নিজের বক্তৃতার সময় আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথার রেশ ধরে কার্তিক বলেন, “তমোনাশ ঘোষের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। তাঁর মৃত্যু মেনে নেওয়ার অর্থ পুরনো তৃণমূল কর্মীদের মৃত্যু স্বীকার করে নেওয়া। এখন আর তৃণমূলে পুরোনো কর্মীদের মূল্য নেই, জয়দীপদার কথার রেশ ধরে আমি বলতে চাই, এখন সব অর্ধশিক্ষিত হাইটেক নেতারা দল চালাচ্ছেন। তাই হয়তো তমা’দের মতো নেতাদের আর এখন দলের প্রয়োজন ছিল না। তাই তো এইসব অর্ধশিক্ষিত হাইটেক নেতাদের সামনে আনা হচ্ছে।” কোন শ্রেনীর নেতাদের হাতে তৃণমূলের (TMC) নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে, সে প্রসঙ্গে অবশ্য স্মরণসভায় খোলসা করেননি তিনি। তবে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গেরা মনে করেছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব গণআন্দোলনের পথ ত্যাগ করে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য ‘পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট’ প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরে অর্ধশিক্ষিত যুবনেতাদের দাপাদাপির চেষ্টার বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন তাঁর ভাই।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভের সুরে বলেন “তমোনাশ ঘোষের মতো মানুষ যিনি ফলতার মতো এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক হয়েছিলেন। তাঁকে নিজের বিধানসভায় যেতে বারণ করা হয়েছিল। আমরা যারা তমা”দার কাছে ছিলাম, তাদের কাছেই তিনি বলতেন আমি তো মানুষকে নিয়ে থাকতে চাই। অথচ আমাকে সেখান থেকে দূরে করে দেওয়া হচ্ছে।” প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, দলে সেভাবে গুরুত্ব পাননি সদ্য প্রয়াত এই নেতা, এমনটাও অভিযোগ করেছেন কার্তিক। নতুন তথা যুবনেতাদের দাপটে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়া পুরোনো নেতা-কর্মীদের হয়েই এদিন মূলত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাই।
প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতিচারণায় মদন মিত্র বলেন, “আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলতে পারি, আজ পাড়ার ছেলে ছিলাম, কাল ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলাম। তখন আমার মাটিতে পা পড়তো না। মনে হতো মেঘের ওপর দিয়ে হাঁটছি আমি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরেও তমা বদলায়নি। সব সময় মাটিতে পা রেখেই চলেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি আমার যোগ্যতার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, তমা’র যা প্রাপ্য ছিল তা হয়তো ওর পাওয়া হয়নি।”