সুমন ভট্টাচার্য….
উত্তরবঙ্গের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার কে রাজ্য সভাপতির পদে বসিয়ে বিজেপি কার্যত দক্ষিণবঙ্গ তৃণমূলকে ওয়াকওভার দিয়ে দিল| দক্ষিণবঙ্গ, আনুপাতিক হিসাবে যেখানে বিধানসভা কেন্দ্র অনেক বেশি তো বটেই, এমনকি লোকসভার ৪২ টির মধ্যে ৩৪টি আসন যেখানে, সেখানে বিজেপি র ঝান্ডা টিঁকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে যাবে| প্রথমে মুকুল রায়,এবং তারপরে বাবুল সুপ্রিয়র মতো হেভিওয়েটের দল ছাড়া এমনিতেই গেরুয়া শিবিরের ভাবমূর্তিকে জোরদার ধাক্কা দিয়েছিল| তারপরে এইবার উত্তরবঙ্গের একজন সাংসদ, যিনি রাজ্য রাজনীতিতে একেবারে নবাগত, তাঁকে সভাপতি পদে বসিয়ে বিজেপি দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের কাছে কার্যত আত্মসমর্পণ ই করল|
আমাদের মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী পাটিগণিত অনুযায়ী দুই ২৪ পরগণায় সবচেয়ে বেশি আসন,৬৪ টি| তারপরে যে জেলাগুলিতে বেশি আসন,অর্থাৎ হাওড়া, হুগলি, নদিয়া বা বর্ধমানে বিজেপি এমনিতেই লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিধানসভায় বিজেপি খারাপ ফলাফল করেছে| এরপরে যে ভাবে একে একে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দল ছাড়ছেন, তাতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গেরুয়া শিবিরের পক্ষে সংগঠন ধরে রাখা মুশকিল| তার উপরে হাওড়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বেসুরো গাইছেন, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজের কেন্দ্রের ভিতরে বিধানসভাতেও জিততে পারেননি| অর্থাৎ কার্যত ১২০ টি আসনের লড়াইতে বিজেপি এমনিতেও পিছনে ছিল, এখন আরও পিছু হটে যাবে|
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন জিততে গেলে বা ক্ষমতায় আসতে গেলে দক্ষিণবঙ্গের ২৪০ টি আসনে জেতাটা জরুরি| সিপিএম যে ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল, সেটা দক্ষিণবঙ্গে রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য| তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার চাবিকাঠি ছিল দক্ষিণবঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো, বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণায় জনসমর্থন বাড়ানো| এমনিতেই এইসব বড় জেলায় বিজেপি সাংগঠনিক দিক থেকে তো দূর্বল ছিলই, জনভিত্তিও বিশেষ ছিল না| সেই জন্যেই মুকুল রায় চেষ্টা করেছিলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় বা তৃণমূল থেকে অন্য নেতাদের এনে সংগঠন তৈরি করার| মুকুল রায়ের দলত্যাগের পরে বিজেপি র হয়ে সেই উদ্যোগ নেওয়ার কেউ ছিলেন না, এবার উত্তরবঙ্গের একজন সাংসদকে এনে সভাপতি পদে বসানোর পরে বিজেপি র হয়ে দক্ষিণবঙ্গে টক্কর দেওয়ার কেউ থাকল না|
এটা সবাই জানে, রাজনৈতিক ভাবে আরএসএস বা বিজেপি বাংলা ভাগের তত্বে বিশ্বাস করে| আসলে আরএসএস তাত্বিকভাবেই ছোট রাজ্যের তত্ত্বে বিশ্বাস করে| সেই কারণে বিজেপি বা আরএসএস সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতি করে আসলে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কি না, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে| কারণ বিজেপির উত্তরবঙ্গের সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাই এখন আলাদা রাজ্যের দাবি তুলছেন| আরএসএস থেকে আসা সুকান্ত মজুমদার হয়তো সেই পরিকল্পনাকে নতুন মাত্রা দেবেন|