ডম্বরুপাণি উপাধ্যায় :
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যজ্ঞ।
এই কি প্রথম?
এক কথায় উত্তর, না।
বাড়ির ব্যক্তিগত পরিসরের মধ্যে প্রবেশ না করেও পাঠকরা জেনে রাখতে পারেন, তৃণমূল ভবনেও একদা যজ্ঞ হয়েছিল। বিরাট যজ্ঞ।
রাজ্য রাজনীতির খবরের আকাশ যখন জুড়ে আছে সুদীপ্ত সেন আর দেবযানীর কাহিনীতে, সেই সময় মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাইপাসের ধারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয় তৃণমূল ভবনে।
গতকাল, অর্থাৎ শনিবারের যজ্ঞের সঙ্গে, সেদিনের যজ্ঞের একটি বড় ফারাক অবশ্য আছে।
কী সেই ফারাক?
সেদিনের যজ্ঞানুষ্ঠানের খবর জনৈক সাংবাদিকের কানে পৌঁছেছিল। তিনি সেই খবর টি করেও ছিলেন। একটি নামী বাংলা কাগজে খবরটি প্রকাশিতও হয়েছিল। কিন্তু মজার কথা, কোনও নেতার মুখ দিয়ে সেই যজ্ঞানুষ্ঠানের সত্যতার কথা বার করতে পারেন নি সেই সাংবাদিক। এতটাই ছিল গোপনীয়াতা।
বর্তামানে যিনি রাজ্যের মন্ত্রী, এমনই এক নেতা সারাক্ষণ ধরে যজ্ঞের কাজ তদারকি করেছিলেন। অতি সজ্জন সেই মন্ত্রী যজ্ঞের কথা স্বীকার করলেও, তাঁর বয়ানে একটি শব্দ লেখারও অনুমতি পান নি সাংবাদিক। ‘তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন’ ছাড়া তাঁর সম্পর্কে আর একটি লাইনও লেখা যায় নি।
আর এবারের যজ্ঞ?
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগের যজ্ঞ?
প্রচার পেয়েছে ঢাকঢোল বাজিয়ে। এমন কী মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব ফেসবুক পেজেও লাইভ করা হয়েছে এই অনুষ্ঠান।
ফারাক টা এখানেই, আর সম্ভবত একুশের ভোটের আগে কিছুটা হলেও বিজেপির নৈতিক জয় এখানেই।
সেবার যজ্ঞের খবর কেন গোপন করতে চেয়েছিল তৃণমূল? এই রাজ্যের রাজনীতির ধরন সম্পর্কে ওয়ারিবহাল মানুষ সে কথা জানেন।
সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে যেন এই বার্তা না পৌঁছয়, যে তৃণমূলের প্রধান কার্যালয়ে সনাতনী হিন্দু মতে যজ্ঞ হচ্ছে।
ভণ্ড রাজনীতির দস্তুরই হল দ্বিচারিতা।
কোনও রাজনৈতিক দল ইফতার পার্টি দিতে পারে, কিন্তু যজ্ঞ? কক্ষনো নয়!
যজ্ঞের খবর পেলে সংখ্যালঘুরা কি সত্যিই ক্ষুণ্ণ হতেন? হয়ত নয়। কিন্তু তাই বলে তো আর রিস্ক নেওয়া যায় না!
কে না জানে নচিকেতার সেই গান,
“ভয় ভয় ভয় ভয়
পাছে ভোট নষ্ট হয়।”
২০১৩ সালের সেই রাখঢাক করা যজ্ঞের পর একুশের যজ্ঞ একেবারে খুল্লামখুল্লা।
তাহলে কি হিন্দুদেরও কোনও বিশেষ বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে ৩০-এর বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের?
হোমকুণ্ড থেকে নির্গত ধোঁয়ায়, এই প্রশ্নটিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।